মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১,৭০০, ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম জোরদার
![]() |
উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্প বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে। |
মায়ানমার, মার্চ ৩০, গ্লোবাল টাইমস বাংলা: মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১,৭০০-তে পৌঁছেছে, এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৩,৪০০ জন। দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩০০ জনের বেশি। শুক্রবার ঘটে যাওয়া ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিকে মিয়ানমারের শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চলছে
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে সাহায্য পৌঁছানোর জন্য ভারত, চীন এবং থাইল্যান্ড থেকে ত্রাণ সামগ্রী ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং রাশিয়াও সাহায্য প্রেরণ করেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সংস্থা জানিয়েছে, পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে এবং জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।
"ধ্বংসযজ্ঞ অত্যন্ত ব্যাপক, এবং মানবিক সহায়তার চাহিদা প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে। গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও আসন্ন বর্ষা মৌসুমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর দ্রুত পুনর্বাসন অপরিহার্য," সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ২ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য ২ মিলিয়ন ডলার তহবিল ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, USAID-এর একটি জরুরি উদ্ধারকারী দলও প্রেরণ করা হচ্ছে।
যুদ্ধ ও ভূমিকম্পের দ্বৈত সংকট
সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্প মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে, যার ফলে লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত এবং বহু হাসপাতাল চিকিৎসা প্রদানে অক্ষম হয়ে পড়েছে।
ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো ও সংকট মোকাবিলার আহ্বান
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের বহু সেতু, রেলপথ, বিমানবন্দর ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাগাইং অঞ্চলের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়ার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর দ্রুত পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের ভূমিকম্প পরিস্থিতি ও সতর্কবার্তা
ভূমিকম্পের প্রভাব পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ডেও অনুভূত হয়েছে, যেখানে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে ১৮ জন নিহত হয়েছে। এই দুর্যোগের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ভূমিকম্প প্রস্তুতি এবং ভবন নির্মাণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
উদ্ধার কাজে বাধা ও মানবিক সংকট
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছু এলাকায় সরকারি সহায়তা এখনো পৌঁছেনি। সাগাইং শহরের এক বাসিন্দা জানান, "আমরা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী। বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং খাবার ও পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে।"
বিশ্ববাসীর সহায়তা প্রয়োজন
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারে জরুরি সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
গ্লোবাল টাইমস বাংলার শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url