কঙ্গো ও রুয়ান্ডার শান্তি আলোচনা বাতিল: স্থিতিশীলতার পথে নতুন চ্যালেঞ্জ
একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বৈঠকের মুহূর্ত, যেখানে দুই প্রতিনিধি পারস্পরিক আলোচনা করছেন। পিছনে পতাকা ও আনুষ্ঠানিক পরিবেশ বিষয়টির গুরুত্বকে ফুটিয়ে তুলছে। |
কিনশাসা, ১৫ ডিসেম্বর, (গ্লোবাল টাইম বাংলা): কঙ্গো এবং রুয়ান্ডার রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে রবিবার নির্ধারিত শান্তি আলোচনা বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে উভয় দেশ। এর ফলে পূর্ব কঙ্গোতে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনের আশায় জল ঢালা হয়েছে।
এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল অ্যাঙ্গোলায়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চলছে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এম২৩ বিদ্রোহ পূর্ব কঙ্গোকে অস্থির করে তুলেছে এবং আফ্রিকার গ্রেট লেক অঞ্চলজুড়ে বৃহৎ সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
কঙ্গোর সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "রুয়ান্ডার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের অস্বীকৃতির কারণেই এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বাতিল করা হয়েছে।" তারা জানায়, রুয়ান্ডা একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের শর্ত হিসেবে এম২৩ বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি আলোচনা করার দাবি তোলে, যা কঙ্গো প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুয়ান্ডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী অলিভিয়ার নডুংগিরিহে বলেন, "বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে," তবে তিনি বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেননি।
সংঘাতের কারণ ও প্রেক্ষাপট
শান্তি পরিকল্পনার আওতায় রুয়ান্ডাকে তার তথাকথিত প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল। এর বিনিময়ে কঙ্গোকে হুতু বিদ্রোহী গোষ্ঠী, 'ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অফ রুয়ান্ডা (FDLR),' নির্মূল করতে হবে। এই গোষ্ঠী অতীতে রুয়ান্ডার ও কঙ্গোর তুতসি জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।
কঙ্গো এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা অভিযোগ করেছে যে, রুয়ান্ডা এম২৩ বিদ্রোহীদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, রুয়ান্ডা তাদের সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে এম২৩-কে সাহায্য করছে। এম২৩ গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে কঙ্গোর তুতসিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, যা রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের জাতিগোষ্ঠী।
অন্যদিকে, রুয়ান্ডা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের অভিযোগ, কঙ্গো FDLR গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের তাদের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ করেছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানান, এ বছর প্রায় ৩,০০০ থেকে ৪,০০০ রুয়ান্ডার সেনা কঙ্গোতে অবস্থান করছে এবং তারা "এম২৩-এর কার্যক্রমে বাস্তবিক নিয়ন্ত্রণ" প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শান্তি আলোচনার এই ব্যর্থতা কঙ্গো এবং রুয়ান্ডার মধ্যকার উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এই সংকট ইতোমধ্যে ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং অঞ্চলটির স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একইসাথে, বড় আকারের সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আফ্রিকার গ্রেট লেক অঞ্চলজুড়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস বাংলার শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url